মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি নিস্কাশনের খালগুলো এখন ময়লার ভাগাড়

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সেচ প্রকল্পের ডি-৩ প্রধান খালসহ বেশিরভাগ খাল দখল ও বর্জ্যে জর্জরিত। ছেংগারচর বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটির মুখ এখন ময়লার স্তূপে পুরোপুরি বন্ধ। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, কয়েক দশক আগে যেখানে নৌযান চলাচল করতো, সেই খাল এখন রূপ নিয়েছে সরু ড্রেনে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকদের অভিযোগ, বর্ষার মৌসুমে ভারী বৃষ্টিতে পানি সরে না যাওয়ায় ছেংগারচর পৌর এলাকা, কলাকান্দা, মোহনপুর, গজরা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে কৃষিজমি ডুবে যায়, ফলন ধ্বংস হয়। বিশেষ করে ডি-৩ খালের মুখে ময়লা জমে থাকায় পানি আটকে যাচ্ছে, যার ফলে চারপাশে পানিতে তলিয়ে যায় আবাদি জমি।
হানিরপাড়ের কৃষক লাল মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বৃষ্টি হলেই জমিতে পানি জমে। ময়লার কারণে খাল দিয়ে পানি যায় না। ফলনও হয় না।
কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আঃ সাত্তার বলেন ডি-৩ খালটি বহু চেষ্টায় সংস্কারের আওতায় এলেও ছেংগারচর বাজার অংশটি এখনো অবহেলিত। কয়েকদিন আগের বৃষ্টিতেই আমাদের জমিগুলো তলিয়ে গেছে।
ছেংগারচর বাজারের ব্যবসায়ী শরীফ উল্লাহ দর্জি জানান, দোকানদারদের ময়লা না ফেলতে অনুরোধ করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে মাটি ও ময়লা অপসারণের দাবি জানিয়েছি।
খাল খননের দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, প্রায় ৮০ কিলোমিটার খাল সংস্কারে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। যদিও কাজের মান ও গতি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে নানা প্রশ্ন রয়েছে। অনেকেই বলছেন, কচুরিপানা সরানো হলেও তা আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে কাজ যেন “ধরি মাছ না ছুঁই পানি” ধরনের।
সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সলিম শাহেদ আশ্বাস দিয়ে বলেন, ডি-৩ খালসহ অন্যান্য খালের কচুরিপানা ও ময়লা অপসারণে কার্যক্রম চলছে। অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, খালগুলো পরিষ্কার না থাকায় জলাবদ্ধতায় জমি অনাবাদি থাকছে। কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, ডি-৩ খাল আমি নিজে পরিদর্শন করেছি। পাউবোকে বলেছি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে। কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ আসছে। নিজেও চেষ্টা করছি সমাধানে ভূমিকা রাখতে।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের খালগুলো এক সময় ছিল উন্নত কৃষির চাবিকাঠি। আজ তা-ই রূপ নিয়েছে দখল-দূষণের করাল গ্রাসে। নিয়মিত খনন ও কঠোর তদারকি ছাড়া কৃষক বাঁচবে না, জমিও ফলন দেবে না।
প্রশাসন ও পাউবোর সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এ সঙ্কটের সমাধান নেই, এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।