মতলব উত্তরে চাচার ঘুষিতে ভাতিজার মৃত্যু

মতলব উত্তর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণচক গ্রামে কিস্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে চাচার ঘুষিতে ভাতিজা নিহত হয়েছেন।
বুধবার (৩০ জুলাই ২০২৫) সকালে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম মাইনুদ্দিন সরকার (৪৫)। তিনি রুহুল আমিন সরকারের ছেলে। নিহত মাইনুদ্দিন সরকার (৪৫), পেশায় একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি এবং স্থানীয় বাজারে তার একটি ইলেকট্রনিক্স দোকান রয়েছে। ব্রাহ্মণচক চৌরাস্তা মোড়ে ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম (টিভি, রেডিও, ঘড়ি) মেরামতের দোকান চালাতেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রবিউল হক জানান, নিহতের স্ত্রী মাফিয়া বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। অভিযুক্ত ফারুক সরকার (৫২) পলাতক রয়েছেন এবং তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চাঁদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ লুৎফর রহমান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার খায়রু ল কবির ও মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রবিউল হক ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাইনুদ্দিন সরকারের চাচা ফারুক সরকার (৫২) মাইনুদ্দিনের স্ত্রী মানছুরা বেগমের মাধ্যমে বেসরকারি এনজিও ব্যুরো বাংলাদেশ থেকে একটি এনজিও থেকে এক লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। সেই ঋণের কিস্তি নিয়মিত না পরিশোধ হওয়ায় উভয় পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।
ঘটনার দিন সকালে টাকা সংক্রান্ত বাকবিন্ডার এক পর্যায়ে ফারুক সরকার ভাতিজা মাইনুদ্দিনকে ঘুষি মারেন। এতে মাইনুদ্দিন সরকার মাটিতে লুটিয়ে পড়েন পরে স্থানীয়রা দ্রুত তাকে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়, যেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্ত্রী মানছুরা বেগম বলেন, “ফারুক ও তার স্ত্রী মাফিয়া বেগম কিস্তির টাকা আমাদের বই দিয়ে তোলেন, কিন্তু সময়মতো টাকা শোধ করছিলেন না। এনজিওর লোকেরা আমাদের চাপ দিচ্ছিল। আজ রাস্তায় দেখা হলে আমার স্বামী টাকা চাইলে ফাররুক হঠাৎ আক্রমণ করে। আমার স্বামী কোনো অন্যায় করেনি, শুধু সত্য বলার অপরাধে চাচা তাকে মেরে ফেলেছে। আমি এর ন্যায়বিচার চাই। আমার ছয় মেয়েকে নিয়ে এখন আমি কোথায় যাব? আমি এর বিচার চাই।”
ঘটনার পর পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ লুৎফর রহমান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মতলব সার্কেল) খাইরুল কবির ও ওসি রবিউল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
মতলভ উত্তর থানার ওসি রবিউল হক আরও বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি পারিবারিক ও আর্থিক বিরোধজনিত বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন। অভিযুক্ত ফারুক সরকারকে আটকের জন্য পুলিশের অভিযান চলছে।
এদিকে নিহতের পরিবারে এখন শুধুই শোকের ছায়া। নিহত মাইনুদ্দিন রেখে গেছেন স্ত্রী ও ছয় কন্যাসন্তান। স্থানীয়রা দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।