চাঁদপুর সকাল

শ্রীলঙ্কানদের মুখেও ‘শামীম, শামীম’

২৬ দিন আগে
শ্রীলঙ্কানদের মুখেও ‘শামীম, শামীম’
সংবাদ সম্মেলন কক্ষে আসতে হয় গ্যালারির একটা অংশ হয়ে। উল্টো দিকে নির্মীয়মাণ নতুন প্রেসবক্স ভবনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাই খেলোয়াড়দের কাছে পাওয়ার ভালো সুযোগ থাকছে রণগিরি ডাম্বুলা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের দর্শকদের। ম্যাচের দিন খেলা শেষে একটু অপেক্ষা করলেই গ্যালারির ওই অংশের দর্শকেরা সুযোগটা পেয়ে যান।

রোববার রাতে যেমন তাঁরা হাতের কাছে পেয়ে গেলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার শামীম হোসেনকে। সিরিজে ফেরা ৮৩ রানের জয়ের পর সে পথে সংবাদ সম্মেলনে আসা–যাওয়ার সময় দর্শকেরা ঘিরে ধরলেন তাঁকে। কাঁধে হাত দিয়ে সেলফি তুললেন, পেছন থেকে দু–একজন ‘শামীম…শামীম’ বলে স্লোগানের মতোও তুললেন।


৫০ বলে ৭৬ রান করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ অধিনায়ক লিটন দাস। তবে শামীমের ২৭ বলে ৪৮ রানের ইনিংসটি না হলে বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন হয়তো অসম্পূর্ণই থেকে যেত। ইনিংসের শুরুতে কুশল মেন্ডিসকে সরাসরি থ্রোতে রানআউট করে তিনিই আবার শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ধাক্কাটাও দিয়েছেন। সব মিলিয়ে শামীমের জন্য মনে রাখার মতো এক রাত, যে রাত তাঁকে ঠাঁই করে দিয়েছে শ্রীলঙ্কান দর্শকদের মনেও।


শামীম অবশ্য তাঁদের কাজটা এখনো শেষ হয়নি বলেই মনে করেন। ১৬ জুলাই কলম্বোর শেষ টি–টোয়েন্টিটি এখন ‘ফাইনালে’ রূপ নিয়েছে। ভালো খেলতে পারলে শেষ ম্যাচ জিতে টি–টোয়েন্টি সিরিজ জয়ও অসম্ভব মনে করছেন না তিনি, ‘শেষ ম্যাচেও আমাদের জয়ের সুযোগ থাকবে। সিরিজ এখন ১–১। ভালো খেললে আমরা সিরিজটা জিততেও পারব।’


ক্যান্ডির প্রথম টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটিং অতটা ভালো না হলেও শামীমের ৫ বলে অপরাজিত ১৪ রানের ক্যামিওতে টি–টোয়েন্টির ঝাঁজ ছিল। আজও তাঁর দুই ছক্কা আর পাঁচ বাউন্ডারির ইনিংসে ঝলসে উঠেছে একই আত্মবিশ্বাস। শামীমের কথা শুনে মনে হলো, এই আত্মবিশ্বাসই তাঁর বড় সম্পদ, ‘যে জায়গায়ই ব্যাটিং করি না কেন, আমি আত্মবিশ্বাসী থাকি। চেষ্টা করি ভালো কিছু করতে।’ ব্যাটিংয়ে ভালো ইনিংস খেলা, বোলিংয়ে অবদান রাখা কিংবা ভালো ফিল্ডিং—সবকিছুকেই শামীম মনে করেন নিজের দায়িত্ব। তাঁর ভাষায়, ‘এসব করে খুশি হওয়ার কিছু নেই। এটাই আমার প্রতিদিনের কাজ।’


শামীমের খেলায় ইতিবাচকতা খুঁজে পাওয়া যায় সব সময়ই। দল জিতলে সেটা বেশি চোখে পড়ে, হারলে অনেক সময়ই তা হারিয়ে যায় গ্লানির আড়ালে। আজ ছিল চোখে পড়ার রাত। তবে শামীমের কাছে এটাও বিশেষ কিছু নয়, ‘আমি যখনই ব্যাটিংয়ে যাই, ইতিবাচক পরিকল্পনা নিয়ে যাই। অনেক সময় ঝুঁকি নিতে হয়। তখন নিজ থেকে দায়িত্ব নিয়েই ঝুঁকি নিয়ে খেলি।’ এবি ডি ভিলিয়ার্স যাঁর প্রিয় খেলোয়াড়দের একজন, ঝুঁকি নিয়ে খেলাটাই অবশ্য তাঁর জন্য স্বাভাবিক।


২ উইকেট হারিয়ে নড়বড়ে শুরুর পর বাংলাদেশের ইনিংসটাকে পথ দেখিয়েছেন মূলত লিটন দাস। শামীমের কথায়ও অধিনায়কের প্রশংসা, ‘লিটনের ইনিংসটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। লিটন ভালো শুরু করায় আমরাও ভালো রান করতে পেরেছি।’ ৭ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর লিটন আর তাওহিদ হৃদয়ের ৬৯ রানের জুটিতেই ম্যাচে থাকে বাংলাদেশ। যদিও ২৫ বলে ৩১ রানের ইনিংসে হৃদয় যেন ঠিক টি–টোয়েন্টির দাবি মেটাতে পারেননি। শামীম অবশ্য বলেছেন, ‘মাঝেমধ্যে একটু ধীরেও খেলতে হয়। ওই সময় ভালো জুটি দরকার ছিল আমাদের। লিটন ও হৃদয়ের ইনিংসে সেটা হয়েছে।’


ব্যাট হাতে কারও ঝড়, কারও একটু ধীরে খেলা—ম্যাচ জিতলে সবই হয়ে যায় জয়ের অংশ। যে জয়ের স্বপ্ন এখন শেষ ম্যাচেও।