চাঁদপুর সকাল

প্রতি আসনে জনপ্রিয় নেতার হাতেই যাবে ধানের শীষ

৩ মাস আগে
প্রতি আসনে জনপ্রিয় নেতার হাতেই যাবে ধানের শীষ
এতদিন নির্বাচনের সময় নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা থাকলেও আপাতত সেটা নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বহুল আলোচিত ও গরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সরকারের এমন যৌথ ঘোষণায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তাই দল হিসেবে বসে নেই বিএনপি। দলটি দেশের সব সংসদীয় এলাকায় সুচিন্তিতভাবে কাজ করছে বলে জানা গেছে। তাদের দলের ধানের শীষ প্রতীকের বাহক ঠিক করছে।

আগামী নির্বাচনে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ৩০০ আসনের প্রার্থী বাছাই করছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে একাধিক জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৫ আগস্ট-পরবর্তী নেতাদের ভূমিকা নিয়েও। গত ১০ মাসে যেসব নেতারা নিজের এবং দলের ইমেজ নষ্ট করেছেন, তাদের এবার সুযোগ দেওয়া হবে না। বিশেষ করে দখল চাঁদাবাজি, মামলা বাণিজ্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের পুনর্বাসনের জন্য অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন এমন নেতাদের তালিকা তৈরি করতে কাজ করছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এর একটি টিম।

জানা গেছে, অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নেতারা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তারা আর কোনোভাবেই সুযোগ পাচ্ছেন না। দলীয় নমিনেশন বা সংগঠন কোন পর্যায়ে তাদের আর রাখা হচ্ছে না। দলের ইমেজ নষ্ট করতে যেসব নেতা ভূমিকা রেখেছেন বা দলীয় নেতাকর্মীদের প্রশ্রয় দিয়েছেন, তাদের বাদ দিয়ে এবার জনগণ চায় এমন নেতার হাতেই ধানের শীষ তুলে দেওয়া হবে। জনগণের প্রত্যাশার আলোকে, বা জনগণ যাকে চায়, যার জনপ্রিয়তা দলেও বেশি এমন নেতাদের প্রার্থী করা হবে এবারের নির্বাচনে। এরই মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এমন বার্তা দলের সর্বস্তরে দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের আমলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ-বর্জনের মধ্যে থাকা বিএনপি আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। বিশেষ করে বিতর্কিতদের বিষয়ে পুরোপুরি নেতিবাচক অবস্থান নিয়েই প্রার্থী মনোনয়নের চিন্তা দলটিতে। দলের জন্য সত্যিকারের ত্যাগী, সৎ ও ব্যক্তি হিসেবে গ্রহণযোগ্য এবং ভোটের মাঠে জনপ্রিয়দের হাতে ধানের শীষ তুলে দেবে বিএনপি। এক্ষেত্রে ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের বর্তমান অবস্থানও পর্যালোচনা করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের জন্য পরিশ্রমী ও মাঠে ছিলেন এমন নেতাদের পাশাপাশি অনেক আসনে ৫ আগস্টের পর ‘সুবিধাবাদী’ শ্রেণির আগমন ঘটেছে। আওয়ামী লীগের পুরো আমলে রাজপথে ছিলেন না, কোনো মামলা নেই, পুরো সময় সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলেন- এমন লোকজনও নির্বাচনী জনসংযোগ শুরু করেছেন। ফলে প্রার্থী বাছাই করা চ্যালেঞ্জ হবে নীতিনির্ধারকদের জন্য। যে কারণে আগেভাগেই আসনভিত্তিক মনিটরিং করা হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে।

দলের এমন সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হলে তরুণ নেতাদের মধ্যে অনেকের কপাল খুলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অনেক আসনে একদম নতুন কাউকে মনোনয়ন দিয়ে চমক তৈরি করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। খুলনা বিভাগের একটি আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী সাবেক ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত দল প্রার্থী বাছাইয়ের যে মানদণ্ডের কথা বলছে, তাতে স্থির থাকলে আমাদের বয়সি নেতারা অনেকে মনোনয়ন পাবেন। আমরা গত ১৫ বছর খেয়ে না খেয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি মাঠে থাকতে। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা আছে। একাধিকবার জেলও খেটেছি। অনেক সিনিয়র নেতার এলাকায় তরুণ অনেকে ভালো অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে আরো সময় নেবে বিএনপি। আগামী ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে নির্বাচন ধরে নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনের চূড়ান্ত রোডম্যাপের ঘোষণা এলে তখন প্রার্থী কারা হবেন, তা দৃশ্যমান হবে। আপাতত সম্ভাব্য প্রার্থী কিংবা আগ্রহী যারা মাঠে আছেন তাদের প্রতি নজর রাখছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০১৮ সালের বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়, সে সময় মনোনয়ন পক্রিয়ায় ভিন্ন কৌশল নেয় বিএনপি। মামলা-সাজা দিয়ে ভোটের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে এমন আশঙ্কায় ২০১৮ সালের নির্বাচনে এক আসনের বিপরীতে একাধিক প্রার্থীকে চিঠি দিয়েছিল। তবে এবারের নির্বাচনে এমন কোনো আশঙ্কা নেই। বিএনপির জন্য এখন ভোটের মাঠ অবারিত। এজন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজনকেই চূড়ান্ত বাছাই শেষে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘২০১৮ সালের মতো একাধিক প্রার্থী হবে না। এবার দলের সিদ্ধান্ত হলো একক প্রার্থী নির্ধারণ করা।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনের জন্য সবসময় প্রস্তুত। বড় দলে অনেকেই প্রার্থী হতে আগ্রহী থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। দল সবার বিষয়ে খোঁজখবর নেবে, মাঠের পরিস্থিতি দেখে একজনকে চূড়ান্ত করবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হবে।