মিটফোর্ডে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদকে নৃশংসভাবে হত্যা

রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটে গেছে এক বিভীষিকাময় হত্যাকাণ্ড। বুধবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯)-কে। হামলাকারীরা শুধু মারধরেই থেমে থাকেনি, বরং তাঁকে বিবস্ত্র করে ইট-পাথর, লোহার রড ও কংক্রিটের খণ্ড দিয়ে বারবার আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ক্লিপ রীতিমতো জনমনে ক্ষোভ ও শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, আহত অবস্থায় লুটিয়ে পড়া লাল চাঁদের শরীরের ওপর দাঁড়িয়ে কেউ কেউ লাফাচ্ছে, কেউ কংক্রিট ছুঁড়ে মারছে।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীর স্বজনদের ভাষ্য অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ ব্যবসায়িক বিরোধ ও চাঁদাবাজি। নিহত লাল চাঁদ এক সময় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেও জানা গেছে।
এ ঘটনায় নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন, যাতে ১৯ জনের নাম উল্লিখিত এবং অজ্ঞাত আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান ওরফে মহিন এবং তারেক রহমান ওরফে রবিন নামের দুজন যুবদলের পরিচিত মুখ। রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তলও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। র্যাবও কেরানীগঞ্জ থেকে আরও দুজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে, তবে তাঁদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠন ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। জামায়াতে ইসলামি, সিপিবি, ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলনসহ একাধিক সংগঠন এটিকে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে। ছাত্র ফেডারেশন ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ইতোমধ্যে বিক্ষোভ করেছে, আরও কিছু সংগঠন আজ কর্মসূচি পালন করবে।
ঘটনার পর বিএনপি এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে। যুবদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে মামলার ১১ ও ১৩ নম্বর আসামি—সাবাহ করিম ও রজ্জব আলীকে। ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল থেকেও বহিষ্কার হয়েছে দুই সদস্য—অপু দাস ও কালু।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, "এ ধরনের পাশবিক হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আরও শক্তিশালী হবে।" তিনি অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ অভিযোগ করেন, "ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।"
নিহতের পরিবার জানায়, লাল চাঁদ দীর্ঘদিন ধরেই পুরান ঢাকার রজনী বোস লেনে একটি ভাঙারি ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন। এলাকার কিছু প্রভাবশালী চাঁদাবাজদের সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক বিরোধ চলছিল। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় হামলাকারীরা তাঁর দোকানে ঢুকে তাঁকে জোরপূর্বক বের করে আনে এবং মারধর শুরু করে। পরে তাঁকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে পেটানো হয় এবং রাস্তায় ফেলে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
ডিএমপি’র উপকমিশনার তালেবুর রহমান জানান, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের কাজ চলছে। পুলিশ বলছে, এই হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত ছিল এবং এতে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক চাঁদাবাজদের সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।