চাঁদপুর শহরে জগন্নাথ দেবের পাঁচটি রথ যাত্রা

চাঁদপুর জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে,এদিন সকাল থেকেই দলে দলে নানা বয়সী মানুষ শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দিরসহ শহরের বিভিন্ন মন্দিরে হাজার হাজার ভক্তের আগমনে রথ বাড়ি মুখরিত হয়ে ওঠে। মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মীয় পাক পরিক্রমাসহ বিভিন্ন মাঙ্গলিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রথযাত্রার অনুষ্ঠান মালা। ভক্তের উলুধ্বনি আর শঙ্খ-কাশরের শব্দে পুরো এলাকা যেন উৎসবে মেতে ওঠে। ঢাক-ঢোল বাদ্য, শঙ্খ ও উলুধ্বনি দিয়ে জগন্নাথ বলরাম-সুভদ্রাকে রথারোহন এবং রথের দড়িতে টান দেয়া হয়। আগামী ৫ জুলাই উল্টো রথ টানের মধ্য দিয়ে এই উৎসব শেষ হবে।
রথযাত্রা উৎসব সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হয় আগে থেকেই চাঁদপুর জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রাখেন।
শহরের মুন্সেপ পাড়া ইসকন মন্দির এর সামনে রথযাত্রা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও বিশেষ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম ও চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক।
পুরান বাজার হরিসভা শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গনে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসাবে রথযাত্রা উৎসবের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সুচিত্র রঞ্জন দাস।
এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাঁদপুর সদর সার্কেল আব্দুল হান্নান রনি, চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক কুমার ঘোষ,জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদে সভাপতি অ্যাড. বিনয় ভূষণ মজুমদার, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি পন্ডিত নরেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র সাহা,জেলার জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি পরেশ চন্দ্র মালাকার,ইসকন চাঁদপুর জেলা সভাপতি শ্রীমান জগদানন্দ পন্ডিত দাস ব্রহ্মচারী,পুরানবাজার হরিসভা শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দিরের অধ্যক্ষ বিশাল গোবিন্দ দাসাধীকারী,সদর উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লক্ষণ চন্দ্র সূত্রধরসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা,রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সনাতন ধর্মাম্বলি অসংখ্য ব্যক্তিবর্গ।
উৎসব ও শোভাযাত্রায় সনাতন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ এতে অংশ নেয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন,চাঁদপুর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি মডেল জেলা।এখানে সকল ধর্মের মানুষ মিলেমিশে আছে।
অত্যন্ত সুন্দরভাবে তারা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান করে থাকে।আজকের রথযাত্রা’র এই সুন্দর আয়োজন দেখে আমি মুগ্ধ। আমি রথযাত্রা উৎসবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম বলেন,এই রথযাত্রা উৎসব সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে এজন্য আমরা চাঁদপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। প্রত্যেকটা অনুষ্ঠান যেন সুন্দরভাবে সুষ্ঠুভাবে এবং যথাযথ ধর্মীয় গাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। চাঁদপুরের সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সার্বিক সহযোগিতা আমরা পেয়ে থাকি।আমরা যে ধর্মেরই হই না কেন, ধর্মীয় তাৎপর্য মেনে চললে কোথাও সমস্যা হবে না।
চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক বলেন, বিএনপি সবসময়ই সকল ধর্মের মানুষের পাশে থেকেছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।তিনি বলেন,গণতন্ত্রের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশই আমাদের স্বপ্ন ও অঙ্গীকার।তিনি রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া সনাতন ধর্মামম্বলি সবাইকে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানান।
উল্লেখ্য,সনাতনী রীতি অনুযায়ী, প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা।
বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে আনন্দমুখর পরিবেশে চাঁদপুরে ৮ দিনব্যাপী শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা মহোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আগামী ৫ জুলাই বিকাল ৩টায় উল্টো রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে এই উৎসব শেষ হবে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, জগন্নাথদেব হলেন জগতের নাথ বা অধীশ্বর। জগৎ হচ্ছে বিশ্ব আর নাথ হচ্ছেন ঈশ্বর। তাই জগন্নাথ হচ্ছেন জগতের ঈশ্বর। তার অনুগ্রহ পেলে মানুষের মুক্তিলাভ হয়। জীবরূপে তাকে আর জন্ম নিতে হয় না। এই বিশ্বাস থেকেই রথের উপর জগন্নাথ দেবের প্রতিমূর্তি রেখে রথ নিয়ে যাত্রা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।