ন্যাটোর আদলেই পাকিস্তান-সৌদি আরব চুক্তি, যোগ দিতে পারবে অন্য দেশ

ন্যাটোর অনুকরণেই তৈরি হয়েছে পাকিস্তান-সৌদি আরব প্রতিরক্ষা চুক্তি। এতে যোগ দিতে পারবে অন্য দেশ। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দরজা বন্ধ নয়, ভবিষ্যতে আরও দেশ চুক্তিতে যোগ দিতে পারবে।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর রিয়াদের আল-ইয়ামামা প্রাসাদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এবং সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’তে সই করেন। এই চুক্তি অনুযায়ী, এক দেশের ওপর আক্রমণ হলে তা উভয় দেশের ওপর আক্রমণ বলে বিবেচিত হবে এবং তা মোকাবিলায় যৌথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জিও নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফ বলেন, এই চুক্তি ন্যাটোর মতো সমন্বিত প্রতিরক্ষা জোটের দিকেই ইঙ্গিত করে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান এবং মুসলিম বিশ্ব দীর্ঘদিন ধরেই একটি যৌথ প্রতিরক্ষা কাঠামোর প্রয়োজন বোধ করছিল।
পাকিস্তানি মন্ত্রী আরও বলেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতাও প্রয়োজনে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ হতে পারে। তবে পাকিস্তান সব সময় দায়িত্বশীল পারমাণবিক শক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিদর্শনের জন্য নিজেকে উন্মুক্ত রেখেছে। এর বিপরীতে ইসরায়েল কখনোই এমন কোনো পরিদর্শনের সুযোগ দেয়নি।
চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি কোনো আক্রমণাত্মক ব্যবস্থা নয়, বরং প্রতিরক্ষামূলক। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে সৌদি সেনাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে, নতুন এই চুক্তি সেই সহযোগিতারই সম্প্রসারণ।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসী পদক্ষেপ, বিশেষ করে কাতারে হামাস প্রতিনিধিদলের ওপর আক্রমণের পর এই চুক্তির গুরুত্ব আরও বেড়েছে। সৌদি আরবের জন্য এটি ইরান ও হুথি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হুমকি মোকাবিলারও একটি কৌশলগত পদক্ষেপ।
ইতিহাসে পাকিস্তান-সৌদি সামরিক সহযোগিতা দীর্ঘদিনের। ১৯৭৯ সালে মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ দখলের সময় সৌদি বাহিনীকে সহায়তা করেছিল পাকিস্তানের বিশেষ বাহিনী। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক নিরাপত্তা চুক্তি হয়, যার আওতায় পাকিস্তানি সেনারা দীর্ঘ সময় সৌদিতে অবস্থান করেছে।
নতুন চুক্তিকে বিশ্লেষকরা কয়েক দশকের মধ্যে পাকিস্তান-সৌদি সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন। এটি পাকিস্তানকে একদিকে আর্থিক ও বিনিয়োগের সুযোগ এনে দেবে, অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে একটি ইসলামি প্রতিরক্ষা কাঠামোর কেন্দ্রে নিয়ে আসবে।