এখনই যুদ্ধ থামাতে হবে—ইসরায়েলকে যুক্তরাজ্য-ফ্রান্সসহ ২৮ দেশের চাপ

ইসরায়েলকে শিগগিরই যুদ্ধ থামাতে বলছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডাসহ ২৮টি দেশ। গতকাল সোমবার, এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে দেশগুলো। কাতারি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিবৃতিটিতে তারা বলেছে গাজাবাসীদের দুর্ভোগ নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। এখনই যুদ্ধ থামাতে হবে ইসরায়েলকে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হলো যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, গ্রিস, জাপান, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন এবং সুইজারল্যান্ড। দেশগুলোর পক্ষে তাঁদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।
ইসরায়েলের প্রতি পশ্চিমা মিত্রদের ভাষা যে ক্রমেই কঠোর হয়ে উঠছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে, তার প্রমাণ এই যৌথ বিবৃতি। গাজায় ২১ মাসের বেশি সময় ধরে চলছে ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞ। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই সংঘাতে ভয়াবহ মানবি বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে ২০ লাখের বেশি মানুষকে। গত দুই মাসে যা বেড়েছে ব্যাপক। আর এ সময়ই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এই বিবৃতি দিল তার মিত্র দেশগুলো।
বিবৃতিতে একটি সমঝোতাভিত্তিক অস্ত্রবিরতি, ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হাতে আটক বন্দীদের মুক্তি এবং জরুরি মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানাই। থেমে থেমে খুবই অল্প পরিমাণ ত্রাণ পাঠানো এবং ত্রাণের জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের ওপর গুলি চালানোকে কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। ওই মানুষগুলো শুধু ক্ষুধা-তৃষ্ণার মতো ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানোর তাগিদে ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে গিয়েছিল।’
দুই মাসের বেশি সময় ধরে গাজাকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে রেখেছিল ইসরায়েল। এরপর আন্তর্জাতিক মহলের কঠোর সমালোচনার মুখে গত মে মাসের শেষের দিকে অবরোধ কিছুটা শিথিল করে তারা। এরপর ইসরায়েল ও মার্কিন সমর্থিত বিতর্কিত মানবিক সংগঠন গাজা হিউম্যানিটিরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) তত্ত্বাবধানে শুরু হয় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। জাতিসংঘ ও গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের পর থেকে ওই সংগঠনের ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ৮৭৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলো বলেছে, ইসরায়েল সরকারের ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা বিপজ্জনক, যা অস্থিরতা বাড়াচ্ছে এবং গাজাবাসীর মানবিক মর্যাদা কেড়ে নিচ্ছে। ইসরায়েল সরকার বেসামরিক জনগণকে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা না দিয়ে যা করছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ইসরায়েলকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, গত রোববার উপত্যকাটিতে ত্রাণ সংগ্রহ করতে যাওয়া ৯৩ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর মধ্যে ৮০ জনকে হত্যা করা হয়েছে উপত্যকাটির উত্তরে। নয়জন নিহত হয়েছেন দক্ষিণে রাফা এলাকার কাছে। আর চারজনকে হত্যা করা হয়েছে খান ইউনিসে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, ইসরায়েল থেকে তাদের ত্রাণবাহী ২৫টি ট্রাক গাজা নগরীর কাছে পৌঁছালে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা সেখানে ভিড় করেন। এ সময় ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালান। তবে, ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাজা নগরীর কাছে হাজার হাজার মানুষের ভিড় তাদের কাছে হুমকি বলে মনে হয়েছিল। তাই তারা সতর্কতামূলক গুলি ছুড়েছে। ত্রাণ সংগ্রহ করতে আসা ফিলিস্তিনিদের হত্যার পর প্রতিবারই এই গৎবাঁধা সাফাই গায় ইসরায়েল।