ভারতে গুহায় দুই মেয়েকে নিয়ে ‘ধ্যানমগ্ন’ রুশ নারী উদ্ধার

ঘটনাটি প্রথম আলোচনায় আসে ৯ জুলাই বিকাল ৫টার দিকে। গোকর্ণা থানার পরিদর্শক শ্রীধর এসআর ও তার দল রামতির্থ পাহাড় এলাকায় টহলে ছিলেন। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা পাহাড়ে তল্লাশি চালানোর সময় একটি গুহার কাছে মানুষের চলাচলের আলামত দেখতে পান। পরে সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পান, ৪০ বছর বয়সী রুশ নাগরিক নিনা কুটিনা গুহার ভেতরে অস্থায়ী বাসস্থান গড়ে বসবাস করছেন। সঙ্গে রয়েছেন তার দুই মেয়ে—প্রেমা (৬ বছর ৭ মাস) ও আমা (৪ বছর)। জিজ্ঞাসাবাদে নিনা জানান, তিনি গোয়া থেকে গোকর্ণায় এসেছেন আধ্যাত্মিক নিঃসঙ্গতা খুঁজতে। নগরজীবনের কোলাহল থেকে দূরে গিয়ে ধ্যান ও প্রার্থনায় মনোনিবেশ করতেই তিনি এই গুহাবাস বেছে নিয়েছেন।
তবে পাহাড়ি এলাকাটি অতীতে ভূমিধসপ্রবণ হিসেবে পরিচিত। ২০২৪ সালের জুলাই মাসেই বড় ধরনের ভূমিধস ঘটেছিল এই রামতির্থ পাহাড়ে। আশপাশে বিষধর সাপসহ বিপজ্জনক বন্যপ্রাণীর বিচরণও রয়েছে। এ অবস্থায় দুটি ছোট শিশুকে নিয়ে এমন পরিবেশে বসবাস করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। পরে পুলিশ রুশ নারীকে বোঝান ও সতর্ক করেন। এরপর তারা গুহা থেকে ওই পরিবারকে নিরাপদে নিচে নামিয়ে আনেন। নিনার অনুরোধে তাকে ও তার মেয়েদের কুমটা তালুকের ব্যাংকিকোডলা গ্রামের এক আশ্রমে নিয়ে যাওয়া হয়। আশ্রমটি পরিচালনা করছেন ৮০ বছর বয়সী নারী সন্ন্যাসিনী স্বামী যোগরত্ন সরস্বতী। পরে পুলিশ ও নারীকল্যাণ কর্মকর্তারা জানতে চান তার পাসপোর্ট ও ভিসা সংক্রান্ত তথ্য। শুরুতে নিনা সুনির্দিষ্ট কিছু জানাননি। পরে তিনি বলেন, তার কাগজপত্র হয়তো গুহায় হারিয়ে গেছে।
এরপর গোকর্ণা পুলিশ ও বনবিভাগের এক যৌথ তল্লাশিতে গুহা থেকে তার পাসপোর্ট ও ভিসা সংক্রান্ত নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। তাতে দেখা গেছে, নিনা ভারতে একটি ব্যবসায়িক ভিসায় প্রবেশ করেছিলেন, যার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল। ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল গোয়ার ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও) তাকে একটি এক্সিট পারমিট দেয়। এতে দেখা গেছে, তিনি নেপালে গিয়েছিলেন এবং পরে ২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পুনরায় ভারতে প্রবেশ করেন। এই তথ্য অনুযায়ী, তিনি ভিসার নির্ধারিত সময়সীমা লঙ্ঘন করেছেন এবং বছরের পর বছর ভারতে ‘অবৈধভাবে’ অবস্থান করছেন।
এই ভিসা লঙ্ঘনের কারণে নিনা ও তার দুই মেয়েকে করওয়ার শহরের নারী ও শিশু উন্নয়ন দফতরের পরিচালিত নারী রিসেপশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এদিকে উত্তর কানাড়া জেলার পুলিশ সুপার বেঙ্গালুরুর ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস-এর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। তাদের লক্ষ্য, মা ও দুই মেয়েকে রাশিয়ায় ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা। শিগগিরই তাদের বেঙ্গালুরুতে এফআরআরও কর্মকর্তাদের সামনে হাজির করা হবে বলে জানানো হয়েছে।